বাংলায় যেসব বিদেশী শব্দের বিভিন্ন বানান প্রচলিত এটি তার অন্যতম। এক সময় খ্রীষ্ট এবং খ্রীষ্টাব্দ বানানই বেশি প্রচলিত ছিল। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বানানসংস্কার সমিতি এ বিষয়ে 'প্রচলিত বানানই বজায় থাকিবে' বলে বিধান দিয়েছিলেন। ষ্ট বানান বহু আগে চলিত হয়েছিল। সংস্কার-সমিতির কার্যকালেও তা চলিত ছিল। ষ্ট বানান চলিত হওয়ায় কারণ ষত্ববিধানের প্রয়োগ। সেকালের তাইই প্রচল। কিন্তু বর্তমানে বিদেশি শব্দে ষত্ববিধান ও ণত্ববিধানের প্রয়োগ যে অনর্থক তা প্রায় সকলেই মানেন। প্রথম বানান-সংস্কার সমিতির অনেক নিয়ম জনপ্রিয় হয়েছে, কিন্তু খ্রীষ্টাব্দ সম্পর্কে তাদের নির্দেশ অনেকেই মানতে পারেননি। রবীন্দ্রনাথ মানেননি, অন্যরাও বড় একটা মানেননি। মনীন্দ্রকুমার ঘোষ বলেছেন "রবীন্দ্ররচনাবলীতে খৃষ্ট, খৃস্ট, খ্রীষ্ট, খ্রীস্ট চার বাননাই শোভা পাচ্ছে", যদিও খৃষ্ট বানানের প্রতিই যেন তাঁর পক্ষপাত ছিল।
উদাঃ-
১. "যিশুখৃষ্টের হিসাবের খাতা দেখিলে তাঁহার প্রতি" ---রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ভারতবর্ষের ইতিহাস, ইতিহাস।
এছাড়া অন্যেরাও খৃষ্ট লিখেছেন---
২. "বুদ্ধদেব যিশুখৃষ্ট মোহাম্মদ প্রভৃতি মহাপুরুষদের নিকট" ---প্রমথ চৌধুরী, তরজমা, বীরবলের হালখাতা।
৩. "খৃষ্টপরবর্তী পঞ্চম শতকের প্রথমাংশের অধিবাসী" ---বুদ্ধদেব বসু, ভূমিকা, কালিদাসের মেঘদূত।
আবার কেউ কেউ এ সম্পর্কে দ্বিধাগ্রস্ত নীহাররঞ্জন রায় লিখেছেন, খ্রিষ্টান, খ্রিষ্টীয়, খ্রিষ্টাব্দ (বারোমাস, জুন ১৯৭৮) এবং খ্রিস্ট-পূর্ব, খ্রিস্ট (রবীন্দ্রভারতী পত্রিকা, দ্বিতীয়-তৃতীয় সংখ্যা, ১৭শ বর্ষ ১৩৮৬)। বর্তমানে এই শব্দগুলির বানানে ষ্ট-র পরিবর্তে স্ট-ই অধিকাংশ লেখকের পছন্দ। কিন্তু মূল প্রশ্ন দাঁড়িয়েছে অন্য। খৃ না কৃ? খ্রি না ক্রি? খ্রী না ক্রী? Christ শব্দটি বাংলায় লিখলে হবে ক্রাইস্ট।উচ্চারণানুগ বানান। কেউ যদি Jesus Christ কে লিপ্যান্তর করতে চান তবে জিসাস ক্রাইস্ট নিশ্চয়ই লেখা যেতে পারে। কিন্তু আমরা যখন জিশু বা যিশুখ্রিস্ট বা খৃস্ট লিখি তখন নামটির প্রতিবর্ণীকরণ বা লিপ্যান্তর করি না, বঙ্গীকরণ করি।
যাই হোক, খ্রিস্টাব্দ এবং খ্রিস্ট এই দুই বানানই বেশি সংগত। মূর্ধন্য-ষ যেমন অনাবশ্যক, দীর্ঘ ঈ-কারও তেমনি অনাবশ্যক। অসংস্কৃত শব্দে ঋ-কারও অনাবশ্যক।
আধুনিক বাংলা প্রয়োগ অভিধান
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন