মনসামঙ্গল কাব্যের চরিত্র-পরিচিতি


মনসামঙ্গল কাব্যের নারী চরিত্র

  1. মনসা : এইকাব্যের মূল দেবী, শিব-কন্যা। চাঁদ সদাগরকে তার পুজো প্রচারে বাধ্য করেছে।
  2. বেহুলা : সবথেকে উল্লেখযোগ্য চরিত্র, পৌরাণিক সাবিত্রী চরিত্রের অনুকরণে বেহুলা চরিত্র অঙ্কিত।
  3. নেত/নেতা : মনসার সঙ্গী ও পরামর্শদাত্রী। মনসামঙ্গল কাব্যের উপেক্ষিত চরিত্র।
  4. সনকা : চাঁদ সদাগরের স্ত্রী, লখীন্দরের মাতা। মনসাভক্ত, আমাদের পরিচিত গৃহিণী চরিত্রের মতো।
  5. চণ্ডী : দেবখণ্ডের উল্লেখযোগ্য গৃহিণী চরিত্র, শিবের স্ত্রী। সতীন ভেবে মনসাকে কানা করে দিয়েছিল চণ্ডী।
  6. ঊষা : দেবখণ্ডের আর একটি চরিত্র। মনসার শাপে ঊষা বেহুলা হয়ে মর্ত্যে জন্মায়।
  7. কমলা : চাঁদ সদাগরের সহকারী ধন্বন্তরী ওঝার স্ত্রী ইনি। নিপাট বোকাসোকা বাঙালি বধূ।
  8. সনকার দাসী : চাঁদ সদাগরের অনুপস্থিতিতে সনকার প্রধান সাহায্যকারী ছিল এই দাসী।
  9. দক্ষিণ পাটন রাজ্যের রানী : সদাগর দক্ষিণ পাটন রাজ্যে বানিজ্য করতে গিয়ে সেখানকার রানীকে 'চটের থান'কে বহুমূল্য পোশাক বলে উপহার দিয়েছিলেন।
  10. অমলা : বেহুলার মাতা। একজন সাধারণ কূলবধূ।


-----------------------------------------------------
------------------------------------------------


মনসামঙ্গল কাব্যের পুরুষ চরিত্র


  1. চাঁদ সদাগর : এই কাব্যের প্রধান চরিত্র, এমনকি সমগ্র মধ্যযুগের সমগ্র চরিত্রের মধ্যে শ্রেষ্ঠ চরিত্র। মনসার সঙ্গে বিবাদে অটল পুরুষ। 
  2. লখীন্দর : চাঁদ সদাগরের সপ্তম পুত্র, বেহুলার স্বামী। বিবাহবাসরে সর্পঘাতে মারা যায়। গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হলেও সর্বৈব নিষ্ক্রিয় চরিত্র।
  3. শিব : দেবখণ্ডের চরিত্র। বৃদ্ধ শিব দুর্বল চরিত্রের মানুষ। কাম-লোলুপতার ফলস্বরূপ অযোনিজ মনসার জন্ম হয়। শিব মনসার পিতা।
  4. জরৎকারু : মনসার স্বামী। বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ জরৎকারুকে শিব মেয়ে মনসার স্বামী হিসেবে নির্বাচন করেছিল। পরে জরৎকারু মনসাকে ত্যাগ করে চলে যায়।
  5. ধন্বন্তরী ওঝা : চাঁদ সদাগরের পরম মিত্র। অন্যনাম শঙ্কর গারুড়ি। ঘোর সর্পবিরোধী।এর জন্যেই মনসার প্রয়োজন পড়েছিল আগে ধন্বন্তরী ওঝাকে হত্যা করা।
  6. অনিরুদ্ধ : দেবখণ্ডের চরিত্র, উষার স্বামী। শিবের অভিশাপে লখীন্দর হয়ে মর্ত্যে জন্মায়।
  7. সোমাই পণ্ডিত ও রামাই পণ্ডিত : চাঁদ সদাগরের পরিচিত দুজন পণ্ডিত। সোমাই পণ্ডিত বাণিজ্যযাত্রায় প্রাণ হারিয়েছে। 
  8. সাহে বানিয়া/সায় বেনে: বেহুলার পিতা, একজন ধনী বণিক।
  9. হরি সাধু : চাঁদের প্রতিবেশী এক বণিক। কোনো কোনো মনসামঙ্গল কাব্যে ইনি বেহুলার দাদা হিসেবে পরিচিত। 
  10. চন্দ্রধর মিতা : সপ্তডিঙা ডুবে গেলে চাঁদকে আশ্রয় দিয়েছিলেন একই নামের চন্দ্রধর বণিক। দুজনে মিতা পাতিয়েছিল। চাঁদকে বাড়ি ফিরতে সে তার সাধ্যমতো চেষ্টা করেছিল।
  11. ধনা : চাঁদের নফর ও পরামর্শদাতা। বাণিজ্যকালে ধনার সুবুদ্ধি আমাদের চমকিত করে।
  12. কাজী হাসান-হোসেন : কাজী হাসান-হোসেন অত্যাচারী মুসলমান শাসক, আর এরা দুই ভাই। রাখালদের মনসাপূজা কাজীর পছন্দ হয়না।
  13. তকাই মোল্লা : কাজী হাসান-হোসেনের অনুচর। কাজীর নির্দেশে রাখালদের মনসাপূজার উপাচার নষ্ট করতে গিয়ে রাখালদের কাছে মার খায়।
  14. ঝালু-মালু : অতি দরিদ্র জেলে, ছেঁড়া জালে মাছ ধরে। এরা মনসার ঘট পেয়ে পরে ধনী হয়ে যায়।
  15. তারাপদ কর্মকার : চাঁদ এদ কাছে লোহার বাসরঘর তৈরির বরাত দিয়েছিল। নিপুণ কামার হলেও মনসার ছলনায় একটি ছিদ্রপথ রেখে দিয়েছিল বাসরঘরে।
  16. গোদা : একজন ঘাটোয়াল, অর্থাৎ ঘাট যে পাহারা দেয়। সুন্দরী বেহুলাকে নদীতে যেতে দেখে তাকে ধরতে গিয়েছিল। কিন্তু মাছ ধরার বড়শিতে আটকে গিয়েছিল সে।
  17. আপু ডোম : এও একজন ঘাটোয়াল।
  18. ধনা-মনা : এরা দুই ভাই বেহুলার ভেলা ধরতে গিয়ে নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করে নদীতে পড়ে যায়। 
  19. টেটন : ঘাটোয়াল, জাতিতে মালাকার। নদীতে গলায় কলসি বেঁধে আত্মহত্যা করার সময় বেহুলার তৎপরতায় সে বেঁচে যায়।


মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন