বৈষ্ণব সাহিত্যে অষ্টকালীন নিত্যলীলা --- প্রীতম চক্রবর্তী

বৈষ্ণব সাহিত্যে অষ্টকালীন নিত্যলীলা


বৈষ্ণব ধর্মে রাধাকৃষ্ণের বিগ্রহের জন্য বৈষ্ণব মহান্তগণ সেবক ভক্তদের কিছু রীতি-নীতি বেঁধে দিয়েছিলেন। সেই নিয়মগুলোকে কাব্যরসে মন্ডিত করার জন্য কবি গোবিন্দদদাস "অষ্টকালীয় লীলাবর্ণন" করেছিলেন। ৫১ টি পদ বিশিষ্ট এই কাব্যখানিকেই "বৈষ্ণবীয় অষ্টকালীন নিত্যলীলা" বলা হয়েছে।

বৈষ্ণবদের ধারণা অপ্রাকৃত বৃন্দাবনে নিত্যকিশোর কৃষ্ণ শ্রীরাধার সঙ্গে নিত্যলীলায় মগ্ন হয়ে আছেন। সমস্ত দিন রাত্রির ২৪ ঘন্টাকে ৮টি প্রহরে ভাগ করা হয়। ৮ প্রহর ধরে যে লীলা নিত্যকাল চলে আসছে তাই অষ্টকালীয় লীলা। এরই অনুকরণে অষ্টপ্রহর নাম-সংকীর্তন রীতি প্রবর্তিত হয়েছিল।

গোবিন্দদাসের এই কাব্যের অপর নাম "একান্ন পদ" । পদগুলি সম্ভবত কৃষ্ণদাস কবিরাজের "গোবিন্দলীলামৃত" কাব্যের অনুকরণে রচিত। এক সূর্যোদয় থেকে আরম্ভ করে রাধাকৃষ্ণের দিনলিপি আরেক সূর্যোদয় পর্যন্ত কিরূপ ছিল তা পরপর একান্নটি কবিতায় বলা হয়েছে । 

বৃন্দা সখীর আহ্বানে ভোরে কুঞ্জভঙ্গ হল, রাধা কৃষ্ণ-সঙ্গ ত্যাগ করে নিজের ঘরে গেলেন। কৃষ্ণও মায়ের ডাকে শয্যা ত্যাগ করে দুগ্ধ দোহন করলেন। রাধা স্নানে যাচ্ছেন, কৃষ্ণ গরু নিয়ে মাঠে বেরোলেন। এরপর যমুনাতীরে মিলন হল , জলকেলি হল। কৃষ্ণ ঘরে ফিরলেন , যশোদা দাসী পাঠিয়ে রাধাকে ডাক দিলেন। রাধা কৃষ্ণকে নিজে হাতে রেঁধে খাওয়ালেন ও স্বগৃহে ফিরলেন। অপরাহ্নে কুঞ্জগৃহে আবার মিলন হল, রাধা কৃষ্ণের বাঁশি চুরি করেন, কৃষ্ণ তা রাধার কাছে ভিক্ষা করেন। তারপর উভয়েই নিজ নিজ গৃহে ফিরলেন। কৃষ্ণ ঘরে ফিরে যশোদার স্নেহ লাভ করলেন। রাধাও গৃহে পরিজনদের সেবা করতে লাগলেন। রাতে সবাই ঘুমিয়ে পড়লে নিভৃতে শুরু হয় রাধা কৃষ্ণের অভিসার পর্ব। কুঞ্জগৃহে সুখের মিলনরজনী অতিবাহিত হয়। 

এভাবে প্রত্যহই লীলা চলতে থাকে। ৫১টি পদে ২৪ ঘন্টা সমগ্র দিন-রাত্রি ব্যাপী এই লীলাকে এইভাবেই বর্ননা করা হয়েছে। এটাই বৈষ্ণব সাহিত্যে "অষ্টকালীন নিত্যলীলা" নামে বিখ্যাত হয়ে আছে । 


--------------------------------------------------------------

লেখক


----------------------------------------------------------------


মন্তব্যসমূহ