বৈষ্ণব কবি | সংক্ষিপ্ত পরিচয় -- ১ম পর্ব




১. অনন্ত


বৈষ্ণব পদকর্তাদের মধ্যে ‘অনন্ত’ নামে অন্ততঃ দুজন কবি ছিলেন। দুজনেই ছিলেন অদ্বৈত আচার্যের শিষ্য। একজন অনন্ত আচার্য। অন্যজন অনন্ত দাস। এঁদের মধ্যে অনন্ত দাসই শ্রেষ্ঠ। বাংলা ও ব্রজবুলি উভয় ভাষাতেই অনন্ত দাসের রচনা সুখপাঠ্য।

২. উদ্ধব দাস


উদ্ধবদাসের প্রকৃত নাম কৃষ্ণকান্ত মজুমদার। টেঙা বৈদ্যপুর তাঁর নিবাসস্থল। ইনি ছিলেন শ্রীনিবাস আচার্যের প্রপৌত্র রাধামোহন ঠাকুরের শিষ্য। তিনি ছিলেন পদকল্পতরুর সঙ্কলনকর্তা গোকুলানন্দ সেন বা বৈষ্ণবদাসের বন্ধু। বহু বিষয়ে বাংলা ও ব্রজবুলি উভয় ভাষাতেই তাঁর পদরচনায় তুল্য দক্ষতা ছিল।

৩. কবিশেখর


ষোড়শ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে একজন পদকর্তা কবিশেখররায়শেখরশেখর প্রভৃতি ভণিতা দিয়ে উৎকৃষ্ট পদ রচনা করেন। এঁর প্রকৃত নাম দৈবকীনন্দন সিংহ পিতার নাম চতুর্ভুজ ও মাতার নাম ইরাবতী। ইনি ছিলেন শ্রীখণ্ডের রঘুনন্দনের শিষ্য। এঁর লেখা অন্যান্য গ্রন্থ — গোপাল বিজয়গোপাল চরিত প্রভৃতি কাব্য এবং গোপীনাথ বিজয় নাটক।


৪. কবিরঞ্জন


শ্রীখণ্ডের রঘুনন্দনের শিষ্য কবিরঞ্জন ব্রজবুলি ভাষায় বিদ্যাপতির অনুসরণে পদ রচনা করেন। এই কারণে এঁকে ‘ছোট বিদ্যাপতি’ বলে অভিহিত করা হয় (রসকল্পবল্লী—রামগোপাল দাস)। অনেকে উপরিউক্ত কবিশেখরকেও ছোট বিদ্যাপতি বলেন।


৫. কবিবল্লভ


করতোয়া তীরবর্তী মহাস্থানের নিকট অরোড়া গ্রামে কবিবল্লভের জন্ম। পিতার নাম রাজবল্লভ। মাতার নাম বৈষ্ণবী। গদাধর পণ্ডিতের শাখাভুক্ত উদ্ধব দাস ছিলেন কবিবল্লভের গুরু। গোবিন্দদাস কবিরাজের একটি পদে ‘শ্রীবল্লভ’ বলে এঁর উল্লেখ আছে। ‘রসকদম্ব’ নামক বৈষ্ণব সিদ্ধান্ত-গ্রন্থ এঁর রচনা।



--------------------------------------------------------------------
বৈষ্ণব কবিদের সংক্ষিপ্ত পরিচয় ৩য় পর্ব
বৈষ্ণব কবিদের সংক্ষিপ্ত পরিচয় ৪র্থ পর্ব
বৈষ্ণব কবিদের সংক্ষিপ্ত পরিচয় ৫ম পর্ব
--------------------------------------------------------------------

৬. কানুরাম দাস


বৈষ্ণব পদাবলীতে একাধিক কানুরাম দাসের অস্তিত্ব বিদ্যামান। তাঁদের মধ্যে পদাবলীখ্যাত কানুরামদাস ছিলেন নিত্যানন্দ শাখাভুক্ত সদাশিব কবিরাজের পৌত্র এবং পদকর্তা পুরুষোত্তম দাসের পুত্র কানু ঠাকুর। যশোর জেলার পশ্চিমাংশে এঁর পাট। ইনি দ্বাদশ গোপালের অন্যতম। এছাড়া শ্রীখণ্ডবাসী রঘুনন্দন ঠাকুরের পুত্র ও জাহ্নবাদেবীর অনুচর এক কানুরাম, অদ্বৈতশিষ্য কানু পণ্ডিত এবং শ্যামানন্দশিষ্য রসিকানন্দের শিষ্য নীলাচলবাসী এক কানুদাস বিদ্যামান ছিলেন।

৭. কৃষ্ণদাস


উড়িষ্যার দণ্ডকেশ্বরের অন্তর্গত বাহাদুরপুর গ্রামে বাঙালি সদগোপকুলে কৃষ্ণদাসের জন্ম। পিতার নাম কৃষ্ণমণ্ডলমাতার নাম দুরিকা। বহু সন্তানের মৃত্যুর পর কৃষ্ণদাসের জন্ম হওয়ার তার নাম হয় দুঃখী। অম্বিকা কালনায় নিত্যানন্দ-চৈতন্য মন্দিরের সেবকভক্ত হৃদয়চৈতন্য তাঁকে দীক্ষা দিয়ে নাম দেন কৃষ্ণদাস। বৃন্দাবনে জীব গোস্বামী তাঁর পাণ্ডিত্যে ও ভক্তিতে মুগ্ধ হয়ে শ্যামানন্দ নাম রাখেন। পরবর্তীকালে তিনি শ্রীনিবাস ও নরোত্তমের সঙ্গে মিলিতভাবে বৈষ্ণব ধর্ম প্রচারে নিযুক্ত হন। প্রধানতঃ কৃষ্ণদাস নামে এবং শ্যামানন্দ নামেও বাংলা ও ব্রজবুলি ভাষায় তাঁর পদ আছে।

৮. কৃষ্ণদাস কবিরাজ


সুবিখ্যাত ‘চৈতন্যচরিতামৃতে’র রচয়িতা কৃষ্ণদাস কবিরাজ (১৫২৭-১৬১৫) কাটোয়ার নিকটবর্তী নৈহাটী গ্রামের কাছাকাছি ঝামটপুরের নিবাসী ছিলেন। বলরামবেশী নিত্যানন্দের স্বপ্নদেশে কৃষ্ণদাস কৃন্দাবনে সনাতন-রূপ গোস্বামীর আশ্রয় নেন। রূপ গোস্বামীর তিরোধানের পর কৃষ্ণদাস রঘুনাথ দাসের আশ্রয়ে ছিলেন। বঙ্গভাষায় সুবিখ্যাত চৈতন্যচরিতামৃত কাব্যসংস্কৃতে ‘গোবিন্দলীলামৃত’ মহাকাব্য ও ‘সারঙ্গরঙ্গদা’ টীকা রচনায় তিনি বিখ্যাত। পৃথকভাবে পদ রচনা না করলেও চৈতন্যচরিতামৃতের মধ্যে কবিরাজ গোস্বামীর উৎকৃষ্ট পদ রচনার নিদর্শন আছে।

৯. গোবিন্দ আচার্য


ঈশ্বরপুরীর শিষ্য বৃন্দাবনবাসী কাশীশ্বর গোস্বামীর মন্ত্রশিষ্য গোবিন্দ আচার্য বৃন্দাবনের শ্রীগোবিন্দ বিগ্রহের সেবাইত ছিলেন। তাঁর কিছু ভাল পদ আছে।

১০. গোবিন্দ ঘোষ


মুর্শিদাবাদের অধিবাসী বল্লভ ঘোষের অন্যতম পুত্র গোবিন্দ ঘোষ প্রথমে শ্রীগৌরাঙ্গের নবদ্বীপ লীলার পরিকর গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত হন এবং পরে নীলাচল লীলার সঙ্গী হন। এঁর অন্য দুই ভাই মাধব ঘোষ ও বাসুদেব ঘোষ। গোবিন্দের সমস্ত পদই গৌরাঙ্গ বিষয়ক। তিনি কীর্তন গানেও বিশেষ পারদর্শী।


--------------------------------------------------------------------
ঋণ : দেবনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়
--------------------------------------------------------------------

মন্তব্যসমূহ