১১. গোবিন্দদাস চক্রবর্তী
শ্রীনিবাস আচার্যের শিয্য। বোরাকুলি
গ্রামে নিবাস।পত্নীর নাম সুচরিতা, পুত্রের নাম
মাধবেন্দ্র। কবিত্ব ও কীর্তনে বিশেষতঃ ভক্তিতে দশা প্রাপ্তির জন্য তিনি ‘ভাবক
চক্রবর্তী’ নামে প্রসিদ্ধ ছিলেন।
১২. গোবিন্দদাস কবিরাজ
চৈতন্য তিরোধানের চারবছর পর ১৫৩৭ খ্রি.
গোবিন্দদাস কবিরাজের জন্ম ; পিতা চৈতন্য-পরিকর
চিরঞ্জীব। মাতার নাম সুনন্দা। জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা রামচন্দ্র কবিরাজ। প্রথম জীবনে
মাতামহ দামোদরের আশ্রয়ে শাক্ত পরিবেশে প্রতিপালিত হন। চল্লিশ বছর বয়সে শ্রীনিবাস
আচার্যের কৃপায় ব্যাধিমুক্ত হয়ে বৈষ্ণবধর্মে দীক্ষিত হন। গোবিন্দদাসের কবিত্বে
তুষ্ট হয়ে জীব গোস্বামী ‘কবীন্দ্র’ উপাধি দেন। বহুসংখ্যক ভালো বৈষ্ণব পদ ছাড়াও ‘সঙ্গীত মাধব’ নাটক রচনা করেন। আনুমানিক ৭৬ বৎসর বয়সে ১৬১৩ খ্রি. আশ্বিন
মাসের শুক্লা প্রতিপদ তিথিতে গোবিন্দদাস তিরোহিত হন।
১৩. গোপাল দাস
১৫৭০ খ্রিস্টাব্দে গোপাল দাস বা রামগোপাল
দাস শ্রীখণ্ডের বৈদ্যবংশে জন্মগ্রহণ করেন। রঘুনন্দনের বংশধর ও শিষ্য রতিপতি ছিলেন গোপাল দাসের দীক্ষাগুরু। প্রথম বৈষ্ণব পদসংকলন ‘শ্রীশ্রীরাধাকৃষ্ণরসকল্পবল্লী’
গোপাল দাসের সংকলন। এখানে গোপাল দাসের ভণিতায় কবির স্বরচিত পদ আছে। চণ্ডীদাসের
কোন কোন বিখ্যাত পদ এই সঙ্কলনে গোপাল দাসের ভণিতায় পাওয়া যায়।
১৪. ঘনশ্যাম দাস
পদাবলী সাহিত্যে দুজন ঘনশ্যাম দাস।
একজন গোবিন্দদাস কবিরাজের পৌত্র ঘনশ্যাম। ইনি সপ্তদশ শতকের। শ্রীনিবাস আচার্যের
পুত্র গতিগোবিন্দের শিষ্য। সংস্কৃত ও ব্রজবুলিতে পদ রচনায় প্রশংসার যোগ্য। ‘গোবিন্দরতিমঞ্জরী’
নামে ইনি রূপ গোস্বামীর উজ্জ্বলনীলমণির ভাষ্য রচনা করেন। অপর ঘনশ্যাম দাস হলেন
অষ্টাদশ শতকের নরহরি চক্রবর্তী। ‘ভক্তিরত্নাকর’ গ্রন্থে ও ‘গীতচন্দ্রোদয়’ সংকলনে
নরহরি ঘনশ্যাম দাস ভণিতায় স্বরচিত পদ অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
১৫. চণ্ডীদাস
চণ্ডীদাস নামে একাধিক কবি বর্তমান
ছিলেন। ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ রচয়িতা বড়ু চণ্ডীদাস এবং পদাবলীর চণ্ডীদাস দুজনেই
ছিলেন ব্রাহ্মণ এবং বাশুলী-উপাসক বলে উভয়েরই পরিচয় আছে। বাঁকুড়ার ছাতনা ও বীরভূমের
নান্নুর গ্রাম এক এক চণ্ডীদাসকে নিজেদের বলে দাবী করে। চৈতন্যদেব কোন একজন
চণ্ডীদাসের পদ আস্বাদন করতেন বলে জানা যায়। ‘চৈতন্যচরিতামৃতে’ শ্রীচৈতন্যের নিকট
মুকুন্দ কর্তৃক চণ্ডীদাসের যে পদটি উদ্ধৃত তা পদাবলীর চণ্ডীদাসের। রজকিনী রামীর সঙ্গে
চণ্ডীদাসের প্রেমমূলক আখ্যান ও কিংবদন্তী বর্তমান।
১৬. চন্দ্রশেখর
অষ্টাদশ শতকের শেষার্ধের বৈষ্ণব পদকর্তা।
জন্মভূমি কাঁদড়া। পিতার নাম গোবিন্দানন্দ ঠাকুর। ভ্রাতা শশিশেখরও ছিলেন পদকর্তা।
দুজনেই ব্রজবুলি পদের ছন্দোনিপুণ কবি। ‘নায়িকা রত্নমালা’ সঙ্কলনে চন্দ্রশেখরের স্বরচিত ৪৫টি পদ বর্তমান। পদাবলীতে আর
একজন চন্দ্রশেখর ছিলেন চৈতন্যের অন্তরঙ্গ পরিকর চন্দ্রশেখর আচার্য ; ইনি কোমল ও প্রাঞ্জল বাংলা ভাষায় গৌরাঙ্গ বিষয়ক পদের
রচয়িতা।
---------------------------------------------------------------
---------------------------------------------------------------
---------------------------------------------------------------
---------------------------------------------------------------
চাঁদ কাজী
(পরিচয় অজ্ঞাত)
১৭. জয়দেব
বীরভূমের অজয় নদের তীরে কেঁদুলি বা
কেন্দুবিল্ব গ্রামের অধিবাসী। পিতার নাম ভোজদেব, মাতা বামাদেবী, স্ত্রী পদ্মাবতী।
দ্বাদশ শতকের শেষভাগে লক্ষণ সেনের রাজসভার অন্যতম সভাকবি ছিলেন। জয়দেবের রচিত সংস্কৃত
কাব্যের নাম ‘গীতগোবিন্দ’।
১৮. জগন্নাথ দাস
ব্যক্তিগত পরিচয় অজ্ঞাত। জগন্নাথ
দাসের নৌকাবিলাস ও রাসের পদগুলি প্রসিদ্ধ।
১৯. জগদানন্দ
শ্রীখণ্ডের রঘুনন্দন ঠাকুরের বংশধর
জগদানন্দ ছিলেন অষ্টাদশ শতকের কবি। পিতার নাম নিত্যানন্দ বা মদন ঠাকুর।
দুবরাজপুরের জোফলাই গ্রামে কবি জগদানন্দ প্রতিষ্ঠিত গোপীনাথ বিগ্রহ ও গৌরাঙ্গ
মূর্তি বর্তমান। ১৭৮২/৮৩ খ্রি. জগদানন্দের তিরোধান। পদাবলী ছাড়া জগদানন্দের ‘ভাষা
শব্দার্ণব’ নামে একখানি সমধ্বন্যাত্মক শব্দকোষের
খসড়া গ্রন্থ পাওয়া যায়। কবি ছিলেন ছন্দোনিপুণ।
২০. জ্ঞানদাস
বর্ধমান জেলার কাঁদড়া গ্রামে ১৫৩০ খ্রিস্টাব্দে
ব্রাহ্মণ বংশে জ্ঞানদাসের জন্ম। কবি ছিলেন নিত্যানন্দ পত্নী জাহ্নবাদেবীর শিষ্য ও
অনুচর। খেতুরীর বৈষ্ণব মহোৎসবে তিনি উপস্থিত ছিলেন এবং এখানে সমসায়িক কবি বলরাম
দাসও গোবিন্দদাসের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়।
ঋণ : দেবনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়
----------------------------------------------------------
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন