৩১. বৃন্দাবন দাস
শ্রীচৈতন্যের অনুচর শ্রীবাসের ভ্রাতুষ্পুত্রী নারায়ণীর পুত্র বৃন্দাবন দাসের পিতৃপরিচয় অজ্ঞাত। আনুমানিক ১৫২০-২২ খ্রিস্টাব্দে কবির জন্ম। নবদ্বীপের নিকটবর্তী মামগাছি গ্রামের তাঁর প্রথমজীবন কাটে। শেষজীবনে তিনি বর্ধমানের দেনুড় গ্রামে থাকেন। চৈতন্যের প্রত্যক্ষ সংস্পর্শে না এলেও কবি নিত্যানন্দের ঘনিষ্ঠশিষ্য ছিলেন। আঃ ১৫৫০ খ্রিস্টাব্দে সুবিখ্যাত ‘চৈতন্যভাগবত’ রচনা করেন। খেতুরী উৎসবকালে তিনি জীবিত ছিলেন। এর অন্যান্য গ্রন্থ তত্ত্ববিলাস, বৈষ্ণববন্দনা, ভক্তিচিন্তামণি।
৩২. বৈষ্ণবদাস
বৈষ্ণবদাসের আসল নাম গোকুলানন্দ সেন। জাতিতে বৈদ্য, নিবাস কাটোয়ার কয়েক ক্রোশ উত্তরে টেঙা বৈদ্যপুর গ্রামে। গোকুলানন্দ বা বৈষ্ণবদাসের বন্ধু ছিলেন উদ্ধবদাস। কথিত হয় এঁরা ১৭১৮ খ্রি. রাধামোহন ও কৃষ্ণদেবের সুবিখ্যাত স্বকীয়া-পরকীয়া মতের বিতর্কসভায় উপস্থিত ছিলেন। বৈষ্ণবদাস পদরচয়িতা অপেক্ষা সর্ববৃহৎ বৈষ্ণবপদ সংকলন ‘পদকল্পতরু’র সঙ্কলক বলেই সমধিক প্রসিদ্ধ।
৩৩. ভূপতি
ভূপতি সিংহকে কেউ বলেছেন বিদ্যাপতির নামান্তর। কেউ এঁকে বলেছেন কবি চম্পতি। ইনি আসলে উত্তররাঢ়ের জমিদার নরসিংহ। শ্রীনিবাস আচার্যের অনুরক্ত। সহজিয়া বৈষ্ণবরা এঁকে বলতেন ‘রসিক’ মহাজন।
৩৪. মাধব ঘোষ
গোবিন্দ ঘোষ ও বাসুদেব ঘোষের ভ্রাতা মাধব ঘোষ ছিলেন বল্লভের পুত্র। গৌরাঙ্গের নিকট আত্মসমর্পণ করে দুই ভাইয়ের সঙ্গে ইনিও চৈতন্যের নবদ্বীপ লীলার পরিকর হন। মাধব ছিলেন কীর্তন গানে ভ্রাতাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। বাংলায় গৌরপদ ছাড়া ব্রজবুলিতে মাধবের রাধাকৃষ্ণ বিষয়ক কিছু পদও বর্তমান।
৩৫. মালাধর বসু
বর্ধমান জেলার অন্তর্গত কুলীনগ্রামে কবির জন্ম। পিতার নাম ভগীরথ ; মাতার নাম ইন্দুমতী। গৌড়েশ্বর রুকুনুদ্দীন বারবক শাহের নিকট কবি ‘গুণরাজ খাঁ’ উপাধি লাভ করেন। ১৪৭৩ থেকে ১৪৮০ খ্রি. পর্যন্ত ৭ বছরে রচিত কবির ‘গোবিন্দমঙ্গল’ বা ‘শ্রীকৃষ্ণবিজয়’ কাব্যটি ভাগবতের দশম-একাদশ স্কন্ধের অনুবাদ। কবির পুত্রের নাম সত্যরাজ খান।
৩৬. মুরারি গুপ্ত
নিমাই-এর সহধ্যায়ী ও বাল্যসঙ্গী মুরারির আদিনিবাস শ্রীহট্টে। পরে নবদ্বীপে এসে বাস করেন। গৌরাঙ্গের চেয়ে মুরারি বয়োজ্যেষ্ঠ ছিলেন কিন্তু তাঁকে ব্যাকরণে নিমাই ব্যতিব্যস্ত করতেন। প্রথমে মুরারি ছিলেন অদ্বৈতপন্থী ও রামোপাসক। পরবর্তীকালে গৌরাঙ্গের ভক্তিপ্রভাবে ভক্তিবাদে দীক্ষিত হলেও রামোপাসনায় অচল ছিলেন। একনিষ্ঠভাবে রামের উপাসক ছিলেন বলে বৈষ্ণববিশ্বাসে তিনি হনুমানের অবতার। পদাবলী ছাড়াও তাঁর বিখ্যাত রচনা সংস্কৃত কড়চা ‘শ্রীকৃষ্ণচৈতন্যচরিতামৃতম’ প্রথম চৈতন্যজীবনী।
-------------------------------------------------------------
বৈষ্ণব কবিদের সংক্ষিপ্ত পরিচয় ১ম পর্ব
-------------------------------------------------------------
৩৭. যদুনন্দন দাস
সপ্তদশ শতকের কবি যদুনন্দন দাস কাটোয়ার নিকটবর্তী মালিহাটিতে জন্মগ্রহণ করেন। ইনি জাতিতে বৈদ্য। কবি শ্রীনিবাস আচার্যের শিষ্য এবং শ্রীনিবাসের কন্যা হেমলতাদেবীর অনুচর ছিলেন। রূপ গোস্বামীর বিদগ্ধমাধব নাটক, বিল্বমঙ্গল ঠাকুরের ‘কৃষ্ণকর্ণামৃত’ এবং কৃষ্ণদাস কবিরাজের ‘গোবিন্দলীলামৃত’ ইত্যাদি গ্রন্থ অনুবাদ করে যদুনন্দন বিখ্যাত হন। মূলত অনুবাদক হলেও তাঁর রচনা নিছক অনুবাদ নয়।
এছাড়া ষোড়শ শতকে অদ্বৈত গণভুক্ত আর এক যদুনন্দনাচার্য গৌরাঙ্গের ‘অদ্ভুত চরিত' লেখেন এবং নিত্যানন্দ পার্ষদ যদুনন্দন চক্রবর্তীর নামেও কিছু পদ পাওয়া যায়।
৩৮. যদুনাথ দাস
যদুনাথ দাস নামে যিনি গৌরাঙ্গ ও রাধাকৃষ্ণবিষয়ক পদ রচনা করেছিলেন সেই যদুনাথ চক্রবর্তী ছিলেন নিত্যানন্দের সমসাময়িক এবং নিত্যানন্দ শিষ্য গদাধরের অনুচর বলে প্রসিদ্ধ।
৩৯. যাদবেন্দ্র
অষ্টাদশ শতকের কবি যাদবেন্দ্র ছিলেন বীরভূমের কচুজোড়ের রাজা রুদ্রচরণ রায়ের গুরুদেব যাদবেন্দ্র ভট্টাচার্য। বাংলা ভাষায় লেখা কবির সখ্য ও বাৎসল্য রসের পদগুলি বিখ্যাত।
৪০. রাধামোহন ঠাকুর
শ্রীনিবাস আচার্যের প্রপৌত্র রাধামোহন ঠাকুর ছিলেন অষ্টাদশ শতকের বৈষ্ণব পদকার এবং বৈষ্ণবপদ সঙ্কলক।-তাঁর পদ সঙ্কলনের নাম ‘পদামৃতসমুদ্র’, ১৭২৫ খ্রি. মধ্যে সঙ্কলিত। এর সংস্কৃতে রচিত টাকা ‘মহাভাবানুসারিণী’ ও তাঁরই রচনা। ১৭১৮ খ্রি. জয়পুর থেকে আগত স্বকীয়াবাদী কৃষ্ণদেবকে বিতর্কে পরাজিত করে রাধামোহন পরকীয়ামতের মহিমা প্রতিষ্ঠিত করেন। পাণ্ডিত্য ও কবিত্বের জন্য তিনি সমসাময়িক কালের শ্রেষ্ঠ বৈষ্ণবাচার্য।
----------------------------------------------------------------
ঋণ : দেবনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়
----------------------------------------------------------------
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন